GAU

গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে গাকৃবিতে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

গম ব্লাস্ট রোগের টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) দিনব্যাপী হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার মূল প্রতিপাদ্য ছিল,“ব্যাসিলাস ভিত্তিক বায়োকীটনাশক প্রস্তুতি ও ব্যবহার।” বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (আইবিজিই) এর আয়োজনে এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও ইউএসডিএ এর অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার প্রধান লক্ষ্য ছিল গম ব্লাস্টের মতো ধ্বংসাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ মোকাবিলায় রাসায়নিকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব উপায় শেখানো। অংশগ্রহণকারীরা ব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে জৈব বায়োকীটনাশক তৈরি ও মাঠ পর্যায়ে তার প্রয়োগ সম্পর্কে সরাসরি ল্যাবে গিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন গাকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. জাহুরুল করিম। কর্মশালায় বিএএস-ইউএসডিএ প্রকল্পের প্রধান পিআই এবং আইবিজিই এর সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. তোফাজ্জল ইসলাম। কর্মশালাটি তিনটি মূল সেশনে বিভক্ত ছিল। উদ্বোধনী সেশনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আইবিজিই’র পরিচালক প্রফেসর ড. শাহ মোহাম্মদ নাঈমুল ইসলাম। প্রশিক্ষণের কারিগরি পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. লতিফুল বারী ব্যাসিলাস ভিত্তিক জৈব কীটনাশক ফর্মুলেশনের প্রযুক্তিগত দিকগুলো উপস্থাপন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. তোফাজ্জল হোসাইন রনি কীটনাশক প্রস্তুতির প্রক্রিয়া ও প্রয়োগ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণে গাকৃবির বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, আইবিজিই-এর শিক্ষার্থী, বিএআরআই ও ব্রি থেকে আগত আমন্ত্রিত বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার পর উপস্থিতগণ তাঁদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন এবং মতামতের যৌক্তিক সমাধানকল্পে ব্যাখ্যা দেন ড. জেড করিম। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, “গম ব্লাস্ট একটি ভয়াবহ রোগ যা প্রতিবছর ফসলের বিপুল ক্ষতি করে। রাসায়নিকের বিকল্প হিসেবে ব্যাসিলাস-ভিত্তিক জৈব প্রযুক্তি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।” বিশেষ অতিথি ড. জাহুরুল করিম বলেন,“কৃষক পর্যায়ে জৈব বায়োকীটনাশক তৈরির দক্ষতা পৌঁছে দিতে পারলে গম চাষে একটি টেকসই পরিবর্তন আসবে। আমাদের লক্ষ্য কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও উপযোগী সমাধান নিশ্চিত করা।” প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা গম ব্লাস্ট দমনে ব্যাসিলাসের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও প্রয়োগের কৌশল হাতে-কলমে শিখে সরাসরি মাঠে প্রয়োগযোগ্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এ কর্মশালার অন্যতম আয়োজক ড. তোফাজ্জল ইসলাম জানান, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে গম উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের কো-পিআই ড. দিপালী রাণী গুপ্তা।